রফিকুল ইসলাম>>
পনের নভেম্বর,উনিশ’নব্বই ।এরশাদ বিরোধী চুড়ান্ত আন্দোলন চলছে। এই দিনে সর্বদলীয় ছাএ ঐকের মিছিলের প্রস্তুতিকালে ফেনীর রাজপথ হতে আমি সহ নয় জন ছা্এ ইউনিয়নের নেতা গ্রেপ্তার হই।গ্রেপ্তারের পর তৎসময় ফেনী থানায় কর্মরত পিএসআই বন্ধু আরিফুর রহমানের সুবাদে থানাতে গল্পপ করে সময় কাটতে শুরু হল আমাদের । ঘটনায় পুলিশের হাত থেকে পালিযে যাওয়া ছাএনেতা আব্দুল হক সেলিম ভাই আমাদের নিয়ে বিষম উদ্ধিগ্ন ছিল ।এ্ উদ্বিগ্নের কথা পিএসআই আরিফ খেকে জেনে ছিলাম।
এর মধ্যে দুপুর গড়িযে গেছে ,ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্য ময় হয়ে উঠেছে। কথা ছিল মিছিল শেষে ছাএলীগ নেতা কফিল উদ্দিন স্বপনের পিতার কূলখানিতে সবাই মিলে দুপুরে খাওয়া খাব।কিন্তু তা কি আর হবে? কারণ আমাদের মত ফেরারীদের জন্য এই সময় গ্রেপ্তারের ভযে থানায় কাছে কানাও আসবে না।এমন যখন ভাবতে ছিলাম তখন স্বপন ভাইয়ের বড় ভাই, শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক ইলিয়াছ ভূঞা লোক মারফত কূলখানির খাওয়া থানায় পাঠালো।পিএসআই আরিফ তখনই এমন কথা জানালেন।মনে কিছুটা স্বস্থি এল।
খাওয়া শেষে আরিফের উপস্থিতিতে দুষ্টামী শুরু করলাম।শ্লোগান ধরলাম,এরশাদ কই রে- নাইরে, মেরি কইরে নাইরে, সব শালারা বাইসা গেছে বঙ্গবসাগারে।আরিফ তাক্ষনিক বলে উঠলেন ভাইজানেরা এবার থামুন।ওসি স্যার দেখলে আমার চাকুরি খাবে্।পিএসআই আরিফ চাকুরি আগে ব্রি- বাড়িয়া্ ছাএ ফ্রন্টের নেতা ছিল।তার সঙ্গে যে কয়জন পিএসআই ফেনীতে ওই ব্যাচে ছিলেন মিছিল মিটিং শেষে আড্ডার নিত্য সঙ্গী ছিলাম অামি।এই সুবাদে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্টতা ছিল নিবিড়।
এর মধ্যে শহরের দাপুটে দারগা সুরুজ সাহেব থানা এলেন।সুরুজ দারগা সাহেব আমার নাম ধরে বলেন,ছাএ ইউনিয়ন নেতা রফিক সাহেব আছেন।আমি আছি বলতে দারাগা সাহেব বলে উঠেন আপনী সত্যি করে বলুন জেলা পরিষদ প্রশাসক মজিবুল হক সাহেবের অফিস কক্ষে আপনারা কারা কারা হামলা করেছেন।আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে থাকিয়ে রইলাম !মনে মনে চিন্হতায় পড়ে গেলাম।দারগা সাহেব হঠাৎ কেন এমন প্রশ্ন করছেন? তিনি আবারও আমাকে বলেন, সত্য কথা বলুন।না হয় কি ভাবে কথা বের করতে হয় তাও আমার জানা আছে।আমি উনাকে বললাম দেখুন, আমাকে আপনী ব্যাক্তিগত ভাবে চিনেনে এবং জানেন ।কখনোও পেশী শক্তির রাজনীতি আমি ও আমার সহকর্মীরা করি নাই।সেই দিন জেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে আমরা শুধু কালো পতাকা উৎলন করে ছিলাম।পরে সেখানে সমাবেশও করি।এ্ই সময় ও্ইখানে ভাংচুরের কোন ঘটনা ঘটেনি।জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমাদের আগমনের সংবাদ শুনে্ই কক্ষ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।আমরা কেন্দ্র ঘোষিত নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করেছি। দেশে গনতন্ত্রের জন্য ন্যায় সংঘত সংগ্রাম করছি।
আমার বক্তব্যে সুরুজ দারগা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এখানেও রাজনৈতিক বক্তব্য শুরু করলেন বলে চোখ বড় করে হুমকি,ধমকি দিয়ে উত্তেজিত হলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কেন যেন মুচকি হাসিও দিলেন তিনি। সত্যিকার বিষয হচ্ছে, সেই দিন সমাবেশে চলাকালে সর্বদলীয় ছাএ ঐকের কিছু কর্মী জেলা পরিষদ প্রশাসক পালিয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়।পরে তার কক্ষের টেবিলের গ্লাস সহ কিছু আসবাবপএ ভাচুর করে ছিল ।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালে এই ভাবে আমাদেরকে সারাদিন কাটতে হল সদর থানাতে।তবে উৎকন্ঠায় ছিলাম কখন ছাড় পাবো। আবার রাজপথে যাবো । শ্লোগানে শ্লোগানে জেগে উঠবো ।কবি হেলাল হাফিজ সেই ঐতিহাসিক কবিতার ভাষায় বলি ”এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়. এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।